জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গতকারী দেশগুলোর নেতাদের গ্লাসগোতে একত্রিত হওয়ার কথা থাকলেও তাদের মধ্যে যে দেশ সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে তার নেতাকে সম্ভবত এই জমায়েতে দেখা যাবে না। বিশ্বকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ঠিক করতে ও এর অর্থায়ন নিয়ে আগামী রোববার থেকে স্কটল্যান্ডের শহরটিতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬ শুরু হচ্ছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিশ্বনেতাদের এই আলোচনায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সম্ভাব্য অনুপস্থিতির মানে হতে পারে, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদক দেশ এরই মধ্যে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে গত বছর তিনটি বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর গ্লাসগোর এই সম্মেলনে এসে আরও ছাড়ের আশ্বাস দিতে পারছে না তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গ্লাসগোতে এবারের জলবায়ু সম্মেলনে শি’র বদলে দেশটির উপপরিবেশ মন্ত্রী ঝাও ইংমিন এবং চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশটির শীর্ষ জলবায়ু দূত হিসেবে পুনরায় নিয়োগ পাওয়া দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিয়ে ঝেনহুয়া চীনের নেতৃত্ব দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। “একটা বিষয় পরিষ্কার।

কপ২৬ সফল হওয়ার জন্য অন্য (কার্বন) নির্গতকারী দেশগুলোর পাশাপাশি চীনের উচ্চপর্যায়ের সমর্থনেরও দরকার হবে,” বলেছেন বেইজিংয়ে গ্রিনপিসের ঊর্ধ্বতন জলবায়ু উপদেষ্টা লি শুও। জলবায়ু পরিবর্তন-বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী যে গ্যাস, সেই কার্বন ডাই অক্সাইডের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য ৩১ অক্টোবরের থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত হতে যাওয়া কপ২৬ সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্য বিশ্বনেতাদের মতো তাকেও দ্রুত কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি এবং ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ দেশে পৌঁছানোর একটি সময়সীমা নির্ধারণে সম্মেলন আয়োজকদের চাপের মুখে পড়তে হবে।

গত বছর সবাইকে অবাক করে দেওয়া এক ঘোষণায় শি ২০৬০ সালের মধ্যে চীনকে কার্বন নিরপেক্ষ দেশে পরিণত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পরিবেশ বিষয়ক এক পরামর্শদাতা বলেছেন, আরও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে চীন আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে ইচ্ছুক হবে না, বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন তারা নিজ দেশেই জ্বালানি ঘাটতি মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। “বেইজিং এরই মধ্যে তার সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে দিয়েছে,” সংবেদনশীল বিষয় হওয়ায় পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এমনটাই বলেছেন এই পরিবেশ বিষয়ক পরামর্শদাতা।

আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা বলছেন, শি’কে এবারের গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে দেখা যাবে, এমনটা খুব কম মানুষই আশা করছেন। ২০১৯ সালের শেষদিকে কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকে চীনের প্রেসিডেন্টকে উচ্চপর্যায়ের একাধিক বৈশ্বিক সম্মেলনে দেখা যায়নি। এ মাসের শুরুতে চীনের কুনমিংয়ে যে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সম্মেলন হল, শি সেখানেও সশরীরে যাননি।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান বিস্তৃত কূটনৈতিক বিরোধের বাইরে জলবায়ুকে পুরোপুরি ‘স্বতন্ত্র’ ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করার যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা চীন খারিজ করে দেওয়ার পর এবারের জলবায়ু সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য কোনো ‘ব্রেক থ্রু’ আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে, এমন বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্টের সশরীরে উপস্থিতির সম্ভাবনাও তাই কম, বলছেন বিশ্লেষক-কূটনীতিকরা।

শি সম্মেলনে ভার্চুয়ালি উপস্থিতি হতে পারেন, এমন সম্ভাবনা অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। তাদের মতে, আরও ছাড় দেওয়ার পরিবর্তে এবারের সম্মেলনে চীন ও ভারতের অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে থাকতে পারে প্যারিস চুক্তিতে জলবায়ু অভিযোজন ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি স্থানান্তরে সহায়তার লক্ষ্যে ধনী দেশগুলো প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা আদায়ে শক্তিশালী একটি চুক্তি করা। যেবার প্যারিস চুক্তি হয়েছিল, সেই ২০১৫ সালের জলবায়ু সম্মেলনে অবশ্য শি সশরীরেই উপস্থিত ছিলেন।